
স্টাফ রিপোর্টার:-
শিক্ষা মন্ত্রনালয় অনেক আগেই নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ করেছে।কিন্তু লক্ষ্মীপুর কমলনগর বাজারগুলোতে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে নোট ও গাইড বই।কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা রমরমা এই ব্যবসা।শিক্ষা সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের প্রকাশনী সংস্থাগুলো বিশেষ আর্থিক সুবিধা দিয়ে এসব বই বাজারজাত করছে। অপরদিকে,এসব নোট ও গাইড বই বিক্রি করে এক শ্রেণির পুস্তক ব্যবসায়ীরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়,প্রধান শিক্ষকরা বিভিন্ন কোম্পানি
গুলো থেকে শিক্ষার্থী হিসেবে এক থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।ওই টাকা প্রধান শিক্ষকরা একটা অংশ রেখে বাকি টাকা সহকারীদের ভাগ করে দিচ্ছেন।আবার কোন কোন প্রধান শিক্ষক একাই সব টাকা আত্মসাত করার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।উপজেলা মাধ্যমিক ও
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়,এ বছর ১৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও১৪টি মাদ্রাসায় ১৮হাজার ২শ’৭২ জন এবং ৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে১৭হাজার ৮শ’৩৩ শিক্ষার্থী রয়েছে।মাধ্যমিক,মাদ্রাসা ও প্রাথমিকের ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন প্রধান
শিক্ষকরা।সূত্র বলছে,১৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক,১৪টি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং সুপার ৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের গাইড বই কোম্পানি গুলো থেকে হয়তো সর্বোচ্চ ৫০লাখ টাকা নিয়েছেন কিন্তু এদের কারণে
নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রতিসেট বইয়ে এক হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে।এতে অভিভাবকদের ২০কোটির অধিক টাকা মত হাতিয়ে নিচ্ছে কোম্পানি গুলো।সরেজমিনে দেখা গেছে মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে পাঞ্জেরি,লেকচার,
সাকসেস ও ফুলকুড়ি,মাদ্রাসা গুলোতে আল আরাফাহ,আল ফাতাহ,আল ইনতেহান,আলবারাকা কোম্পানির নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন।যার কারণে উপজেলায় বইয়ের দোকান গুলো
তে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণির নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বই।এসব বই ব্যবসায়ীদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।সেই সঙ্গে অভি ভাবকের পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।এ বছর বেশিরভাগ
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেকচার প্রকাশনীর গাইড গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন প্রধান শিক্ষকরা।লেকচার প্রকাশনী এ উপজেলা প্রতিনিধি খলিলুর রহমান মোটা অঙ্কের টাকা ও বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা দিয়ে প্রধান শিক্ষকদের ম্যানেজ করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।জানা
গেছে,সরকার১৯৮০সালে আইন করে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের নোট বই মুদ্রণ,বাঁধাই, প্রকাশনা,আমদানী,বিতরণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।এছাড়া উচ্চ আদালতের এক রায়ে গাইড ও নোট বই মুদ্রণ ও বাজারজাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা
হয়েছে।অপরদিকে,২০০৮সালে নির্বাহী এক আদেশে নোট ও গাইড নিষিদ্ধ করা হয় এবং ২০০৯সালে দেশের সব্বোর্চ আদালতের এক নির্দেশে নোট ও গাইড বই বিক্রয় সম্পুর্ন নিষিদ্ধ করে এক রায় প্রদান করেন।সর্বশেষ পাঠ্যপুস্তকের আদলে
নোট-গাইড নিষিদ্ধ করে শিক্ষা আইন ২০২০’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়ার ১৬ ধারার ১ ও ২ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ,বাঁধাই,প্রকাশ বা বাজারজাত করা
যাবে না।এই বিধান লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
উপধারা ৩-এ বলা হয়েছে,কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নোট বই বা গাইড বই কিনতে বা পাঠে বাধ্য করলে বা উৎসাহ দিলে তা
অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান,ব্যবস্থাপনা কমিটি বা পরিচালনা কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এখতিয়ারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে।এ সব বিষয়ে আইন থাকার পরেও শিক্ষরা আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের
পকেট ভারি করছেন।এবং প্রশাসন আইন সম্পর্কে অবগত থাকলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাজির হাট সরকারি মিল্লাত একাডেমির এক অভিভাবক বলেন,ছেলে মেয়েদেরকে শিক্ষকরা লেকচার গাইড কিনতে তাগিদ দিচ্ছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির গ্রামার ব্যকরনসহ প্রতিসেট বই ১৮শ’থেকে দুই
হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে।যে বই ২ হাজার টাকা কিনতে হচ্ছে ওই সব বইয়ের কাগজ মান অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৮শ’থেকে এক হাজার টাকা হতে পারে।কিন্তু প্রতি সেট বইয়ে ১হাজার থেকে ১২শ’টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে।এটা প্রধান শিক্ষক দের বড় ধরনের বানিজ্য বলে মনে করেন তিনি।চরফলকন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক
প্রধান শিক্ষক মোঃসাদেক বলেন,সরকার গাইড নিষিদ্ধ করছে।কার নির্দেশে এগুলো চলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলের ক্ষতিয়ে দেখা দরকার।এ ছাড়াও কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের বই কিনতে প্রধান শিক্ষকদের মোটা অঙ্কের টাকা ও বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা দিচ্ছেন।আগামী
প্রজন্মের সঠিক শিক্ষার মানোন্নয়নে এ বানিজ্য বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।এ বিষয়ে লেকচার প্রকাশনীর কমলনগর উপজেলা প্রতিনিধি মোঃখলিলুর রহমান বলেন,কোম্পানি আমাকে এখানে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠি য়েছে কোম্পানির বই বিক্রি বাড়ানোর জন্য।এ গাইড বই নিষিদ্ধ কিনা তা আমার
জানা নেই।এ বিষয়ে চরলরেন্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক দোলন বলেন,আমি কোন শিক্ষার্থীকে গাইড বই কিনতে উৎসাহিত করিনা। শিক্ষার্থীরা যে যার মত করে গাইড বই কিনলে আমরাতো বাধা দিতে পারি না।কমলনগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম
বলেন,কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে বসছি।এ সব বিষয়ে তদন্ত করে প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাহাতুজ জামান বলেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন।শীঘ্রই খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন তিনি।